এক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়
এক শনিবার সন্ধেবেলা গিয়েছিলাম গড়িয়ার একটি তালা-চাবির দোকান থেকে চাবি বানাতে | বড় রাস্তার পাশেই একটি ছোটো দোকান | এই প্রথমবার গিয়েছিলাম সেখানে | দোকানের পাশে একটি চেয়ারে একজন ভদ্রমহিলা একটি ছোটো ছেলেকে নিয়ে বসেছিলেন | আমরা পৌঁছতেই বললেন দিদি আপনি বসুন | বললাম না না আপনি ই বসুন | তাঁর সাথে থাকা বাচ্চাটি তখন আমার ছেলেকে দেখে খুব খুশি | ওকে দেখে হাসছে , ওর কাছে আসতে চাইছে | তাই দেখে ভদ্রমহিলা একটু ইতস্তত করছেন | আমার ছেলেও তাকিয়ে আছে বাচ্চাটির দিকে | ছেলেকে বললাম দেখেছো বাবা তোমার একজন বন্ধু ,কথা বলো| ওরা দুজনে দুজনের সাথে কথা বলছিলো, ভদ্রমহিলা খুশি হলেন|জানলাম ,বাচ্চাটির নাম সুরজ আলী, বয়েস : দুই বছর আট মাস | আমার ছেলের বয়েস : তিন বছর তিন মাস | বাচ্চাটি যখন আমার ছেলের গালে হাত ছোঁয়াতে চাইছে , ভদ্রমহিলা বারবার বিরত করছেন তাকে| বাচ্চাটি দৌড়ে তার সাইকেল নিয়ে এসে আমার ছেলেকে দেখাচ্ছিল |আমার ছেলেতো দেখেই উত্তেজিত | আমি ওর হাত ধোরে রেখেছিলাম | বাচ্চাটি বারবার আমার ছেলেকে ডাকছিলো | ছেলেও আমার দিকে তাকিয়ে বলেই যাচ্ছিলো – ‘ আমি সাইকেল চড়বো ‘ বললাম তুমি বাড়িতে গিয়ে চোড়ো | কিন্তু দুটো কচিমন তখন সাইকেলের মাধ্যমে এক হতে চাইছে,কেউ শুনছেনা ধেড়ে মনের মানুষদের কথা | ছেলের হাত টা ছেড়ে দিতেই ও আমার মুখটা একবার দেখেই ছুটলো সাইকেলের কাছে | ওই ভদ্রমহিলা বাচ্চাটির দিদিমা,তার নাতিকে বসালেন সাইকেলের পেছনের সিটে | আমার ছেলেকে ধরতে গিয়েও থমকে গেলেন | আমি নিজেই ছেলেকে বসিয়ে দিলাম| ছেলের অপরিচিত মামা তাদের সাইকেলটাকে একটা দড়ি দিয়ে টানছিলো আর অপরিচিত দিদিমা তাঁর নাতিরা যাতে পড়ে না যায় তাই সাইকেলের পেছনে | ছেলে বোলে যাচ্ছে – ‘ সরে যান , সরে যান,সাইকেল আসছে | সামনেই যাত্রীদের জন্যে অপেক্ষারত একটি বাসের কিছু যাত্রীরা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ওদের দেখছে আর হাসছে | মায়ের মন! ভয় পাচ্ছিলাম বাস টা না চলতে শুরু করে! কাছেই দাঁড়িয়ে ওদের খেলা উপভোগ করতে থাকা এক ভদ্রলোক জানালেন তিনি ওই বাসের কন্ডাক্টর, ভয় নেই কিছু হবে না |বাসের চালক ভদ্রলোকও ততক্ষনে ওদের খেলায় সামিল | তিনি বাসের হেড লাইট জ্বালাচ্ছেন আর নেভাচ্ছেন,বলছেন বাস আসছে কিন্তু ,একটু দেখে !সন্ধ্যাবেলায় সেখানে অনেক মানুষের যাতায়াত | অনেকেই দাঁড়িয়ে ওদের খেলা উপভোগ করছেন | কেউ কেউ দু-একটা কথা বলে খেলায় সামিল ও হচ্ছেন | ব্যস্ত রাস্তায় মুহূর্তেই একটি মজাদার পরিবেশ সৃষ্টি হোলো , যাকে আমি মোবাইল বন্দী করতেই , জ্বলে উঠলো আরো কতগুলো মোবাইল এর আলো | না করতে পারলাম না কাউকেই |
ওই দোকানেই একটু বড় একটি মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন তার বাবা – মা | একটু আগেই মেয়েকে বকছিলেন দোকানের চাবি – মালায় হাত দেওয়ার কারণে | হঠাৎ সেই মা এর দিকে চোখ পড়তেই দেখি নাক – কুঁচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে | হয়তো মনে মনে ভাবছেন,কেমন মা? কিন্তু এই মা তাঁর ছেলের কচি মনে প্রবেশ করাতে চায় না কোনো ভেদ – বিভেদ | মনে মনে ভাবে এইভাবেই যেন তার ছেলে ভালোবাসা দেওয়া – নেওয়ায় কখনোই কোনো কৃপণতা না দেখায় | চাবি তৈরি হয়ে গেলো | চলে আসার সময় কত অপরিচিত মুখের হাসি , আর হাত নেড়ে টা’টা করা আমার ছেলের উদ্দেশ্যে | ছেলের অপরিচিত দিদিমা রাস্তার অপরপ্রান্তে তাঁর ঘরটা নির্দেশ করে বললেন আবার এস| মুহূর্তের ভালোলাগাকে সঙ্গে নিয়েই চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের দিকে|
Disclaimer: The views, opinions and positions (including content in any form) expressed within this post are those of the author alone. The accuracy, completeness and validity of any statements made within this article are not guaranteed. We accept no liability for any errors, omissions or representations. The responsibility for intellectual property rights of this content rests with the author and any liability with regards to infringement of intellectual property rights remains with him/her.